প্রেম করা যেখানে হারাম সেখানে মুনাজাতে প্রমিকা চাওয়া বিলাসিতা

 ২৭ তারিখ ঠিক সময়টা মনে করতে পারছিনা ফেসবুকে স্ক্রলিং করছিলাম। যদিও আমি ফেসবুকে স্ক্রলিং একদম করিনা বললেই চলে। তবে কাল যখন স্ক্রলিং করছিলাম তখন একটা পোস্ট দেখে থমকে গেলাম।

সেই পোস্ট টাতে এক ভাইয়ের লেখাটা ছিলো ঠিক এমন,"প্রেম করা যেখানে হারাম সেখানে মুনাজাতে প্রমিকা চাওয়া বিলাসিতা।" অনাকাঙ্ক্ষিত পোস্টটা পড়ে আমার কৌতুহল তৈরি হলো। কিছুক্ষণ কি নিয়ে যেনো ভাবছিলাম। এরইমধ্যে নিচের দিকে চোখ পরতেই  কিছু বাকবিতন্ডার চিত্র দেখতে পেলাম কমেন্ট বক্সে। যা সত্যি  আমার হৃদয়কে স্পর্শ করলো।  চিত্রটা ছিলো এমনঃ

প্রথম মেয়েঃ ইসলাম ভালোবাসাটাকে বিয়ের আগে জিনার সমতুল্য করেছেন। আর বিয়ের মতো পবিত্র একটা সম্পর্ককে হালাল করেছেন। তবে মন থেকে চাওয়াটা হারাম না। আপনি নেক্কার কাউকে চাইতেই পারেন। যে শুধু দুনিয়াতে নয় পরকালে আপনাকে জান্নাত পর্যন্তু নিয়ে যেতে পারবে। অবশ্যয় ‍সেটা মুনাজাতে, প্রেম করে তারপর চাওয়ার কথা আমি বলছি না।

প্রথম ছেলেঃ হাদীসের রেফারেন্স দিবেন, প্লিজ? আমার জানা মতে কাউকে নির্দিষ্ট করে চাইতে পারবেন না। কারন এমনো হতে পারে আপনি যাকে পছন্দ করছেন আল্লাহ তাকে আপনের জন্য পছন্দ করেন না। 

তার পরপরই ওপাশ থেকে মেয়েটির রিপ্লাই,

প্রথম  মেয়েঃ হ্যাঁ! অবশ্যয়। আপনি হয়তো সুরা-ফারুনের আয়াত নাম্বার ৭৪ টা লক্ষ্য করেননি। ওখানে স্পষ্ট লিখা আছে,"একমাত্র আল্লাহ ভালো জানেন, ভালো স্ত্রী বা স্বামী চাইলে আল্লাহর কাছে দুঁয়া করতে হবে।"

যদি এখানই থেমে যেতো আমি হয়তো পোস্টটা শেয়ার করার প্রয়োজন মনে করতাম না।  যায় হোক তার পরের ঘটনাটা না জানলে হয়তো আপনি অনেক কিছুই মিস করবেন। চলুন রহস্যটা!  না হয়, জেনেই আসা যাক  




দ্বিতীয় ছেলেঃ (প্রথম ছেলেকে উদ্দেশ্য করে) ইসলাম টাকে এতটা কঠিন করছেন কেনো। আপনি নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তিকে চাওয়ার জন্য কোনো রেফারেন্স চাচ্ছেন? আপনি নির্দিষ্ট কাউকে চাওয়া যাবে না এমন কোনো রেফারেন্স দিতে পারবেন? আল্লাহ শরীয়তে বিয়েকে হালাল করেছেন। প্রেম, ভালোবাসার সম্পর্ক হারাম করেছেন। তাই বলে নির্দিষ্ট কাউকে আল্লাহর কাছে চাওয়া যাবেনা এটা নিখাত মুর্খতা। আল্লাহ তো নিজে বলেছেন, "হে আমার বান্দা! তোমাদের কাছ থেকে যদি একটা সুঁই  পরিমান জিনিসও হারিয়ে যায় তাও আমার কাছে চাও।" তাহলে আপনি কেনো পছন্দের মানুষকে আল্লাহর কাছে চাইতে পারবেন না। দেওয়া না দেওয়ার মালিক আল্লাহ সুবহানা তা’য়ালা। তিনিই ভালো জানেন কোনটা আমাদের জন্য ভালো আর কোনটা মন্দ। তাই বলে চাওয়ার পর তাকে না পেলে আল্লাহর উপর ভরসা হারানো উচিৎ নয়। কেনোনা দুঃখের পরেই আল্লাহ সুখকে পত্যাবর্তন করেন। আর এর মাধ্যমেই আল্লাহ বান্দার ধৈর্যের পরিক্ষা নেন। যে সফলকাম সে জান্নাতি আর যে সফল নয় সে জাহান্নামি। তাই সকল মু’মিনের উচিৎ যেকোনো পরিস্থিতিতে যেকোনো সমস্যায় শুধু মাত্র আল্লাহর কাছেই চাওয়া এবং হারাম কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা। পেলে শুকরিয়া আর না পেলে  ধৈর্য্য ধারন করা।

প্রথম ছেলে এবার একদম চুপ হয়ে গেলো। যেনো তার প্রতিবাদের ভাষাটাও সে হারিয়ে ফেলেছে। হারিয়ে ফেলবেই বা না কেন! তার প্রশ্ন করাটাই নেহাত বোকামি ছিলো। সে তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। সে এতক্ষণে বুঝে গেছে। ‍আর একটা বোকার মত কথা বললে ‍সে এতো সহজে ছাড় পাবেনা। তার জন্য চুপ করে থাকাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। তার এসব কিছু ভাবতে ভাবতেই প্রথম মেয়ে বলে উঠলো,

প্রথম মেয়েঃ (দ্বিতীয় ছেলেকে উদ্দেশ্য করে) ভাইয়া, একটা মানুষ নির্দিষ্ট করে তখনই কাউকে চায় যখন সে সম্পর্কে জড়ায়। একটা মানুষ সম্পর্কে না জড়িয়ে কীভাবে নির্দিষ্ট করে কাউকে চাইতে পারে বলবেন, প্লিজ?

দ্বিতীয় ছেলেঃ (প্রথম মেয়েকে উদ্দেশ্য করে) আপনি হয়তো এমন কোনো মেয়ের চিন্তা করতেই পারেন, যে আপনের জানাশুনা এলাকার খাঁটি কোনো মুসলিম পরিবারের সন্তান। আপনি হয়তো এটাও জানেন এরকম জান্নাতি মেয়ে পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার! যেটা আপনার পক্ষে পাওয়াটা প্রায় অসম্ভব বললেও ভুল হবেনা। ঠিক তখন আপনি কি করবেন? কার কাছে চাইবেন? ঐ এলাকার কোন ক্ষমতাবান ব্যক্তি আছে যে আপনার কাছে মেয়েটাকে এনে দিতে পারে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া। এটা কখনোই কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। আপনের নিয়্যত যদি সহিহ্ হয়। আল্লাহ চইলে কবুল করতেও পরেন। তার মানে হচ্ছে সম্পর্কে না জড়িয়েও আপনি নির্দিষ্ট করে কাউকে চাইতে পারেন। তাকে পাবেন কি পাবেন না সেটা পরের বিষয়। ঐযে বললাম,"পেলে শুকরিয়া আর না পেলে  ধৈর্য্য ধারন করা।"

প্রথম মেয়েঃ জি! ভাইয়া।

দ্বিতীয় ছেলেঃ (প্রথম মেয়েকে উদ্দেশ্য করে) বোন, আমরা যে টপিকস নিয়ে আলোচনা করছি। তার আগে একবার ভাবুন তো। আমরা যেকোনো সমস্যায় কার কাছে চাইবো? অবশ্যয় এক আল্লাহর কাছে, তাই নয় কি? সেটা ভালো হোক নাকি মন্দ, একমাত্র আল্লাহ সুবহানা তা’য়ালাই তো সেটা আমাদের চেয়ে ভালো জানেন। আমরা তার কাছে ইবাদাতে বসে কান্না করে যখন চাইবো! এর থেকে ভালো আর কি হতে পারে। দেওয়া না দেওয়া, হালাল-হারাম সেটা পরের ব্যাপার। আমরা যে একান্ত তারই অনুগত সেটাই মুখ্য। আল্লাহ আপনাকে বিবেক দিয়েছেন বুদ্ধি দিয়েছেন এমন কিছু নিশ্চয় চাইবেন না। যাতে আল্লাহর কাছে চেয়ে পরবর্তীতে আপনাকে লজ্জা পেতে হয়। 

কথাটি শেষ হতে না হতেই ছেলেটি বলে উঠলো,"আল্লাহ সহায় হন আমাদের প্রতি। সকল প্রকার ভুল থেকে আমাদেরকে  রক্ষা করুন।"

হায়! অবাক চোখে শুধু এটাই ভাবছিলাম, এই গল্পের যেনো কখোনো শেষ না হয়। এরকম গল্পগুলো ডালপালা মেলুক। ছড়িয়ে যাক গোটা পৃথিবী।

হঠাৎ! নোটিফিকেশনের আওয়াজ।

প্রথম মেয়েঃ ওকে, ভাইয়া। ধন্যবাদ

এবার আমার মুসলিম ভাই/বোনেরা।  আপনারা কাকে ভুল বলবেন প্রথম মেয়েটাকে নাকি প্রথম ছেলেটাকে নাকি ওদের কাউকে দোষ না দিয়ে দ্বিতীয় ছেলেটাকে ভুল ভাবছেন। যাচাইয়ের দায়িত্ব আপনের উপর ছেড়ে দিলাম।

যাকেই আপনি ভুল বা ঠিক বলেন না কেনো। আমি অনেক খুশি এরকম অনবদ্য ইসলামিক বিষয়ে বিতর্ক দেখে। এরকম বিতর্কগুলো বার বার ফিরে আসুক এটাই আমার একমাত্র চাওয়া। আমাদের এই বিতর্ক গুলো ত্বরান্বিত হোক। ইসলামি শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হোক। এটাই তো আমরা চাই। (আল্লাহ-হুআকবর)

কাজী নজরুলের ওই কবিতাটা খুব মনে পড়ছে, 

"আমরা যদি না জাগি,মা!

কেমনে সকাল হবে"