টানা দাবানলে পুড়ার পর বৃষ্টিতে তুরস্কের স্বস্তি

 

টানা ৯-১০ দিনের আগুনে পুড়ে ছাই ৮-১০ টি অঙ্গরাজ্য। শত শত বন্যপ্রাণী পুড়ে কাবাব হয়েছে, কয়েকজন সেচ্ছাসেবীও শাহাদাৎ বরণ করেছেন দাবানলে।


আগুন নেভাতে আন্তর্জাতিক কোন ফর্মুলা বাদ রাখেনি তুর্কি সরকার। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আলী আঁরবাশ, তুর্কি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রধান ঘোষণা দিলেন। আল্লাহ ছাড়া কেউ আগুন নেভাতে পারবেনা, আল্লাহর রহমত ছাড়া এই দাবানল নেভানো সম্ভব না। সুতরাং বৃষ্টির জন্যে দেশব্যাপী 'সালাতুল ইসতিসক্বা' পড়ার আহ্বান জানালেন।


দেশব্যাপী মানুষ যখন কাঁন্নারত 'মোনাজাতে' আর তুর্কি বিরোধিরা তখন সোশ্যাল মিডিয়াতে  ব্যাস্ত ধর্মপ্রাণ তুর্কিদের 'সালাত' নিয়ে ট্রল- আর সারকাজমে। দোয়া করা দেখে টুইটারে এক তুর্কি শাহবাগী-লিখেছে- তুরস্কে বসবাসরত সবাই জানে যে আনতালিয়া অঞ্চলে আগষ্ট মাসে বৃষ্টি হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। দু'য়া নয় বিজ্ঞানে বিশ্বাস করুন।


কারণ এএফপি, রয়টার্স সহ সব বড় বড় আন্তর্জাতিক মিডিয়ার আবহাওয়া নিউজে বৃষ্টি না হওয়ার শতভাগ সম্ভাবনার রিপোর্ট ছাপা হয়েছে।


এর পর পরই আজ শুরু হয়েছে আল্লাহর রহমতের বৃষ্টি। টানা ৯-১০ দিনের আগুন এক নিমিষে নিভে গেছে। 


এক হাদিসে এসেছে, "তোমরা যদি আল্লাহকে জানতে আর বুঝতে তাহলে তোমাদের দু'য়ায় পাহাড় নড়ে উঠতো।"


তুরস্কের কৃষি ও বন মন্ত্রী বলেছেন, ২৮ ই জুলাই থেকে বন্য দাবানলে বিধ্বস্ত তুরস্কে ২২৩ টি দাবানল রয়েছে, যা প্রায় ৪৭ টি প্রদেশকে দখল করে নিয়েছে।  এন্টালিয়া প্রদেশে মাত্র ৬ টি বন্য দাবানল বাকি আছে। 


তুর্কি অগ্নিনির্বাপক দলগুলির নিবেদিত প্রচেষ্টার জন্য বেশিরভাগ আগুন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। সর্বশেষ তথ্যের থেকে জানা যায় দক্ষিণ -পশ্চিম মুয়ালা প্রদেশের কায়েসাইজ, কাভাক্লাদেয়ার, মিলাস, ইয়াতান এবং শাইনে দাবানল অব্যাহত রয়েছে। 


তিনি আরও বলেন, মুয়ালার একটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং পর্যটন এলাকাগুলিকে রক্ষা করার জন্য অগ্নিনির্বাপক দল কঠোর পরিশ্রম করছে, যেখানে প্রাথমিকভাবে ১৫ টি বনে আগুন লেগেছে।


তিনি বলেন, "মিলাসে আগুন এখন সুপ্ত কোন উল্লেখযোগ্য হুমকি সৃষ্টি করবেনা বলে আশা করা যাচ্ছে।"


তুরস্কের কৃষি ও বন মন্ত্রী  পাকডেমিরলি যোগ করেন, "আমরা ১টি বিমান, কয়েকটি মনুষ্যবিহীন বিমানবাহী গাড়ি, ৫৫৭টি হেলিকপ্টার, একটি মানববিহীন হেলিকপ্টার, ৫০৫০ টি ওয়াটার টেন্ডার এবং ট্যাঙ্কার ও ১৫০ টি ইঞ্জিনিয়ারিং গাড়ির সাথে ৫২৫০ জন বনায়ন কর্মী নিয়ে আগুন মোকাবিলা করছি।"


সাংবাদিকদেরকে তিনি আরো বলেন, মুয়ালার মারমারিস, সেডাইকিমার এবং ইয়েলান্লি জেলার দাবানল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে আয়াদান প্রদেশের কারাকাসু এবং বোজদোগান এবং বর্ধুর প্রদেশের দাবানল প্রায় নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে।


পাকডেমিরলি যোগ করেছেন, মধ্য কৃষ্ণ সাগর প্রদেশ কারাবাকের কাছে আরেকটি দাবানলও নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।


আগস্টের শেষের দিকে এবং আগস্টের প্রথম দিকে মানভগাত এবং ওব্রাডা জেলায় বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ার পর দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ আনতালিয়ার স্থানীয়রা খুশিতে পূর্ণ ছিল। কেননা, আগস্ট মাসে বৃষ্টি হবে তা তারা কল্পনাও করতে পারেনি। হঠাৎ বৃষ্টিতে তাদের চোখ আনন্দে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়ে।


বৃষ্টিপাত যখন দাবানলকে নিভাতে সাহায্য করেছিলো ঠিক তখন মানবগটের কিছু লোক হাঁটু গেড়ে বসে প্রার্থনা শুরু করেছিল। প্রধান রাস্তায় বৃষ্টিপাতের জন্য স্রষ্টাকে ধন্যবাদ জানান তারা। কারো কারো বৃষ্টির মাঝে নামাজে লুটিয়ে পড়তেও দেখা যায়। ২০ মিনিট স্থায়ী বৃষ্টি ব্রাডা ও মানবগটের আশেপাশের বনে আগুন নেভাতে সাহায্য করেছিল।


"আমরা আগুন থেকে বাঁচতে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছি। আমরা দুই ঘণ্টার জন্য মৃত্যু অনুভব করেছি।" বলছিলাম ওখানকার সাধারন কৃষকের কথা। তিনি আরো বলেন, "সেরকান গঙ্গার একজন স্থানীয় যার জমি পুরোপুরি ছাঁই হয়ে গেছে। অবশেষে তিনি আনন্দে কাঁদতে কাঁদতে বলেন বৃষ্টির কারণে তিনি কতটা খুশি।"


ভূমধ্যসাগরীয় প্রদেশ ইস্পার্টার স্যাটলার জেলায় ছয় দিন ধরে চলমান দাবানলও বৃষ্টির পরে শেষ হয়েছে।


পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলাত কাভাশুগলু, পরিবেশ ও নগরায়ণ মন্ত্রী মুরাত কুরুম এবং পরিবহন ও অবকাঠামো মন্ত্রী আদিল, আগুনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। পরে তারা তাদের চাহিদা সম্পর্কে শোনার জন্য অগ্নি-প্রভাবিত অঞ্চলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটি বন্ধ দরজা বৈঠক করেন।


আজারবাইজান থেকে একটি অগ্নিনির্বাপক দল, ৪০০ টি ফায়ার ট্রাক এবং ১৫০ জন কর্মী সহ, কৃষ্ণ সাগর সামসুন প্রদেশের হামজার কাছে পাঠানো হয়েছে।


দক্ষিণ এন্টালিয়া প্রদেশের আলানিয়াতে আগুনে কমপক্ষে ১০৭ টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা মেয়র আদেম মুরাত ইয়েসেল এক বিবৃতিতে বলেছেন।


দক্ষিণ -পশ্চিমাঞ্চলীয় মুয়ালা প্রদেশের বোড্রামের জেলা গভর্নর বেকির ইয়ালমাজ জানান, আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত নাগরিকদের প্রতি পরিবারে প্রায় ৩৫০০০ তুর্কি লিরার (৪০০০ ডলারেরও বেশি) প্রাথমিক সহায়তা দেওয়া হয়েছিল।


সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২৮ জুলাই দক্ষিণ ও দক্ষিণ -পশ্চিম তুরস্কে আগুন লাগার পর থেকে কমপক্ষে আটজন নিহত হয়েছে।


তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান আগস্টের শেষের দিকে টুইট করেছেন যে, আগুন নেভানোর জন্য ১১৮ টি উভচর জেট, ৫টি হেলিকপ্টার, ৫,২৫০ জন কর্মী, নয়টি মানববিহীন বিমান এবং ১৫০ টি আর্থমুভার ব্যবহার করা হয়েছে।


তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে বেসরকারি খাত এবং বেসরকারি সংস্থার অবদানের সাথে, বিদেশ থেকে সরবরাহ করা চারটি বিমান এবং একটি হেলিকপ্টারও অংশগ্রহণ করবে।