ছোট্ট সেই মেয়েটি

 

 


ছোট্ট সেই মেয়েটি

মাহামুদুল হাসান অয়ন


একটা ছোট্ট মেয়েকে ভালোবাসতাম
ইশারা-ভঙ্গিমা- মায়ার বাঁধনে 
আগলে রাখতাম।

চোখের আড়াল হলে
কেনো জানি! কষ্টে থাকতাম।

একটা ছোট্ট মেয়েকে ভালোবাসতাম।।

দরজার পাশে কান্নার আঁওয়াজ
চোখের পাতায় পড়ে আছে ভাঁজ।

মনে হতো যেনো ডাকছে আমায়?
এগিয়ে যেতাম কিন্তু আমি অসহায়!

ছোট্ট মেয়েটার সাথে খেলা করা
হাঁসি হাঁসি তার অমন চেহারা,
ভাবে যেনো সে আমার বেয়ারা।

কোলে চড়ে, হেঁটে বেড়ায়
তার কথাতে কথা বাড়ায়।

গল্প উপন্যাস কবিতা ছাড়ায়
কথার রাশি, মিষ্টি হাঁসি বাঁধন হারায়।

তাকে দেখলে মোর প্রাণ জুরায়,
তাই আজও তার জন্য হাতটি বাড়ায়।

কিন্তু কোথায় যেন হারিয়ে গেলো?
খুঁজে ফিরে মন দিশেহারালো।

হ্যাঁ! আজও, আজও আমি খুঁজছি তাকে,
ছোট্ট ঐ মেয়েটাকে।

আঁধো আঁধো মধুর কন্ঠ ভেসে ওঠে
আমার চোখে।

খোদার কাছে প্রার্থনা করি,
খোদা যেন তাকে ভালো রাখে।

আমার ছোট্ট দুষ্টু মিষ্টি  ঐ বন্ধুটাকে।

আমায় বলা হয়ে ওঠেনি কখনো-
"আমি যে বড়ই ভালোবাসি তোকে
আমি যে বড়ই ভালোবাসি তোকে।"



কবিতা লেখার সময়টাকে আমি প্রায় ৪ বৎসর আগে পার করে এসেছি। তখন মাত্র ক্লাস ১১ তে বা ১২ তে পরি। প্রতি দিন নামাজ খুব আগ্রহ সহকারেই পড়া হতো। গল্পের শুরুটা হয় একদিন নামাজ পরে আসার সময়। একটা ছোট্ট বাবুর হায়! বলার মধ্য  দিয়ে। বলে  রাখা ভালো, যে ছোট্ট মেয়ে বাবুটা আমাকে হায় বলেছে তার বাসা থেকে আমার মসজিদে যাওয়া আসাটা স্পষ্ট জানালা দিয়ে দেখা যেতো। যার জন্য আমি আজান দিলে বের হলে সে অপেক্ষায় থাকতো একবার হলেও আমাকে হায় বলবে। যা আমি পরবর্তীতে ছোট্ট বাবুটার বোনদের কাছ থেকে জানতে পারি। ছোট্ট বাবুটার বোন দুজন দেশের একটা নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দ্বীতিয় বা তৃতীয় শ্রেণীতে একই সাথে পরে এবং মজার বিষয় হলো ছোট্ট বাবুটার এ দুজন বোনই জমজ। যদি তারা মটু পাটলু (রূপক অর্থে- এখানে একজন সামান্য চিকন আর একজন সামান্য মোটাকে বুঝানো হয়েছে) না হতো তাহলে তাদেরকে চিহ্ণিত করাটা যে কারো জন্য খুবই দুঃসাধ্য হতো। তবে তাদের কোনো ভাই ছিলোনা।

যায়হোক যে গল্পটা বলছিলাম। ছোট্ট মেয়েটা আমি রোজ মসজিদ থেকে আসার সময় জানালা ধরে দাঁড়িয়ে থাকতো।  আমিও প্রতিদিন তা খেয়াল করতে আরম্ভ করলাম। হঠাৎ একদিন বাবুটার হাত থেকে তার পানির পটটা নিচে পড়ে যাওয়ায়। সেটা নিয়ে আমি বাবুটার বাসার দরজাতে নক দিলাম। নক দেওয়ার সাথে সাথে আন্টি (বাবুটার মা) এসে দরজা খুললো। ততোক্ষণে দুই বোন আর ছোট্ট গুলু গুলু বাবুটা সেখানে এসে হাজির। সেখানে এসেই আমার হাতের আঙুল ধরে ছোফাতে বসতে অনুরোধ করলো। আমি বাবুটাকে কোলে নিয়ে একটু আদর করে চলে আসলাম।  

এরপর দিন জানালার ধারে আর বাবুটিকে দেখতে পেলাম না। হঠাৎ করে  এমন পরিবর্তন বুঝে উঠতে পারছিলাম না। পরে আমাদের ফ্লোরে উঠতে না উঠতেই দেখি বাবুটা তাদের দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছে। আমি বাবুটাকে চোখের ইশারা দিয়ে বুঝাতে চাইলাম কেমন আছো? বাবুটা হয়তো তার রঙিন চশমায় আমার এই ভঙ্গিটাকে রেকর্ড করে ফেলেছিলো। তাই এরপর থেকে যতোবার বাবুটার সাথে দেখা হতো, প্রতিবারই আমার ভঙ্গিমা আমাকেই সে উপহার দিতো। 

হঠাৎ একদিন বাবুটার বোন বাবুটাকে নিয়ে আমাদের বাসায় আসলো। আমি অনেক গল্প করলাম বাবুটার সাথে। খেলা করলাম , আড্ডা দিলাম আরো অনেক কিছু। 

সবকিছু যখন শেষ তখন আবার নতুন কিছু শুরু হওয়ার প্রত্যাশায় দিন পার করতে লাগলাম। সেই থেকে বাবুটা আমার কাছেই থাকতো। আমি পড়ার  টেবিলে বসে পড়তে পড়তে যখন ঘেমে জেতাম, বাবুটা আমার পাসের টিস্যু বক্স থেকে একটা টিস্যু বের করে আমাকে দিতো। আর যে কথাটি বলতো তা আমার এখনো কানে বাজে, “মুছো ঘাম, মুছো ঘাম।”

ছোট্ট বাবুটার বোন আমার বাসায় বাবুটার সকল কিছু নির্দিধায় রেখে যেতো। যাতে সে পুণঃরায় এসে সেগুলো দিয়ে খেলতে পারে। বাবুটার সাথে কাটানো সময়গুলো খুবই অসাধারণ ছিলো। শুধু যতো বিপত্তি হতো আমার বাবা যখন চাকরি থেকে সপ্তাহের একটা নির্দিষ্ট দিনে বাসায় আসতো তখন। আমরা যেহেতু রক্ষনশীল পরিবারের তাই বাবা বাইরের কেউ আমাদের বাসায় সব সময় অবস্থান করুক তা পছন্দ করতেন না। তাই বাবুটা আমাদের বাসায় আসার জন্য অনেক কান্ন কাটি করলেও আমার শুধু দরজার ফাঁকা দিয়ে সেটা দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিলোনা। 
 
একদিন বিকালে কলেজ থেকে মাত্র বাসায় ফিরেছি। দেখলাম আমাদের বাসার সামনের ফ্লাটটির দরজা খোলা এবং ফ্লাটটিতে কাউকেই দেখতে পেলাম না। কিছুটা অবাক হলাম। তারপর সবার কাছে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম বাবুটা তার ফ্যামিলিসহ ফ্ল্যাট ছেড়ে বসুন্ধরা নামক আবাসিক এলাকাতে পাড়ি জমিয়েছে। 

যেই মাত্র জেনেছি তার পর থেকে হণ্য হয়ে বাবুটার খোঁজ করে চলেছি। কিন্তু পুরা বসুন্ধরাতে না আছে তার ফ্যামিলির কেউ, না আসে সেই বাবুটা। এখনো খুঁজছি তাকে হন্য হয়ে। হয়তো কোনোদিন একবারের জন্য হলেও তার ছোটবেলার মায়াটাকে চিনিয়ে দিতে সামন-সামনি হবো।