সপ্নীল রূহী

 

 



সপ্নীল রূহী

মাহামুদুল হাসান অয়ন


জানিনা, কোন সপ্নপুরীতে হারিয়ে গেলেন!
জানিনা, কেনো একলা ফেলে চলে গেলেন!
কী করেছি? কোন দশেতে দিলেন সাযা!
জানিনা, কেনো হতে পারলাম না বন্ধু রাজা!

জানিনা, ঐ আকাশেরা কেনো গল্প করে
জানিনা, কেনো হৃদয় যে মোর সয়না তারে
সত্যি বন্ধু! অবাক হোলাম!
আপনের এই ব্যবহারে-

মিস করছি বন্ধু তোমার ঐ ওয়ার্ড টাকে 
"এই স্টুপিড!" বলে আর ডাকে না কেউ আমাকে-

বেস্ট ফ্রন্ড, কিডনাপার, বন্ধু-
আমি বলবো কাকে?

যায় হোক! খোদা যেনো আমার এই বন্ধুটাকে-
অনেক বেশী ভালো রাখে। 

এখনো বন্ধু চ্যাট করি,
কিন্তু তারা সবাই যেনো 
সপ্নীল এক রাজকুমারী।

গরিব দেশে রাজকুমারী! 
তাই তাদের সাথে দেই আড়ি।

বন্ধু তোমায় বড্ড বেশিই মিস করি। 

বন্ধুত্বের শুরুটাতে আপনি ছিলেন,
শেষটাতেও আপনি থেকেই শেষ হলেন।

জানিনা! আপনি এই আমাকে একা ফেলে-
কতো দূরেই না চলে গেলেন,
কতো দূরেই না চলে গেলেন!

তাই আমার এ গল্পটাতে-
কেবল মাত্র, আপনি থেকেই শেষ হলেন!



সালটা ২০১৩ কি ১৪ হবে। রাত তখন ১১টা বাজে প্রায়।  লুকিয়ে লুকিয়ে মামার মোবাইল হতে নিয়ে ফেসবুকে স্ক্রলিং করছি। হঠাৎ করে ম্যাসেন্জার বেজে উঠলো। 

বলে রাখা ভালো, আমি তখন সবে মাত্র ফেসবুক চালানো শিখছি। তার জন্য ফেসবুকের প্রতি একটু আকর্ষন থাকাটা স্বাভাবিক ছিলো।  আমার সব বন্ধু বান্ধব ফেসবুক চালাতো। তাই আমি ওদের দেখাদেখি যার ফোন পেতাম তার ফেন নিয়েই ফেসবুকে স্ক্রলিং করা শুরু করতাম। মামাও তাদের ব্যতিক্রম নয়। তাই মামা ফোন পাশে রেখে ঘুমানোর সাথে সাথে ছো মেরে তার ফোনটা হাতে তুলে নিলাম। 

এবার আসি মূল গল্পে, ম্যাসেন্জার টুং করে আওয়াজের সাথে সাথেই আমি একটু হকচকিয়ে গিয়েছিলাম। তারপর দেখি নোটিফিকেশন এসেছে। নোটিফিকেশন চেক করতেই দেখতে পেলাম। একটা মেয়ে সপ্নীল রূহী তার নাম। আমাকে হ্যালো বলে ট্যাক্সট পাঠিয়েছে। অনেক আগ্রহ নিয়ে রিপ্লাই কি দিবো, নাকি দিবোনা? সেটা নিয়ে প্রায় ১০ মিনিট ভাবলাম। 

যেহেতু ফেসবুক সম্পর্কে আমি কিছুই জানতাম না। তাই প্রোফাইল থেকে শুরু করে আমার পুরো একাউন্টে এমন কোনো কিছুই ছিলোনা যাতে করে আমাকে চেনা যায়। এমনকি প্রোফাইলের ছবিটাও ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে দিয়েছিলো আমার এক ভাই। সেই মানুষটাকে আমি আমার ফেসবুক ট্রেইনার হিসেবে চিরকাল স্মরণ করবো। 

শত ভাবনা চিন্তার পরে উত্তর দিলাম। হায়! কেমন আছেন? সাথে সাথে উত্তর আসলো ওপাশ থেকে, “জি, ভালো আছি! আপনি?” এভাবে ম্যাসেজের আদান প্রদান প্রায় প্রতিদিনি হতো নির্ধারিত একটা সময়ে। হাসি, ঠাট্টা, তামাশা লেগেই থাকতো যখন আমরা দুজন কথা বলতাম। আমি আমার পুরো বিষয়টা লুকিয়ে রেখেছিলাম তার কাছ থেকে। 

একদিন কথা বলতে বলতে আমার নিজের সম্পর্কে জানতে চাইলো মেয়েটি। আমি কি জবাব দেবো সেটা বুঝতে না পেরে কথাটাকে ঘুরিয়ে নতুন করে হাসি-তামাশায় মেতে উঠলাম। পরে জানতে পারলাম মেয়েটি ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে সাহিত্য নিয়ে পড়ালেখা করছে। ভেবে একটু অবাকই হলাম। কারণ আমি তখন মাত্র ষষ্ঠ বা সপ্তম শ্রেনীতে পড়ি। 

তাই আমি এরপর থেকে আমার সব কথায় লুকাতে লাগলাম এবং হাসি-তামাশা-গল্পের মাধ্যমে অনেক ভালো একটা বন্ধুত্ব তৈরি করে নিলাম। যত সামনে এগুচ্ছিলাম ওর আমার প্রতি আগ্রহটা ততো বাড়ছিলো। আর আমি আগের মতই নানান ভাবে ঘুরিয়ে নিয়ে যেতাম কথাগুলে। 

আমার লুকোচুরির একমাত্র কারণ ছিলো মেয়েটাকে হারিয়ে ফেলার ভয়। কারণ আমিও ততোদিনে কথা বলতে বলতে মেয়েটির সাথে মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পরেছিলাম। মেয়েটি বরংবার আমাকে ফোর্স করেতে লাগলো আমাকে বিশদভাবে জানার জন্য। কিন্তু আমি জানতাম আমি তার থেকে অনেক ছোট তাই সে আমার আসল পরিচয় একবার পেয়ে গেলে হয়তো আমার সাথে আর কথাই বলবে না। 

পরে অবশ্য আমার ভাবনাই সত্যি হলো। সে আমার পরিচয়টা জানার পর আর তার খোজই পেলাম না। খুব মিস করছি তাকে। এখন মনে হচ্ছে এমন একজন বন্ধু প্রত্যেকেরই দরকার নিজের লাইফটাকে সাজায়ে নিতে।