ইভ্যালি আর ই-কমার্স

 


ইভ্যালি নিয়ে কথা বলে বা লিখে শেষ করা হয়ত আমার পক্ষে অসম্ভব। আপনারা হয়ত এখনি ভাবতে শুরু করেছেন, আমি কি ইভ্যালি সম্পর্কে পজিটিভ অভিমত দিবো নাকি নেগেটিভ? হ্যাঁ! ঠিক ধরেছেন, আমি পজেটিভ বলবো নাকি নেগেটিভ ‍সেটা না হয় আপনি আর্টিকেল সম্পূর্ণটা পরার পরেই যাচায় করবেন। তবে আমি একজন ইভ্যালির কাস্টমার হিসেবে যতটুকু ইভ্যালি থেকে পেয়েছি বা হারিয়েছি এখনে সেটাই বর্ণনা করবো। 

ইভ্যালি সম্পর্কে প্রথম আমার বন্ধু রুবেলের কাছ থেকে আমি জানতে পারি। রুবেল ‍সম্পর্কে বলে রাখা ভালো, ‍সে ত্রিপলিতে পড়ে। আর ওর একটা মুদি দোকানও আছে। মাঝে মাঝে দেখতাম মধ্যবৃত্ত ফ্যামিলির ছেলেটি কোথা থেকে জেনো একগাদা পেপসি, কোকাকোলা নিয়ে আসে। প্রথম ভেবেছিলাম হয়ত ডিলারের বিজনেস করছে। পরে জানতে পারলাম সে ইভ্যালি নামক একটা অ্যাপস এর মাধ্যমে এসব কেনা-বেচা করছে এবং প্রতি মাসে ভালো উপার্জনও করছে। কৌতুহল বসত আমিও ঐ অ্যাপসের মাধ্যমে বিজনেস করার জন্য ‍উঠে পড়ে লাগি। পরপর তিনবার বিভিন্ন সময়ে অ্যাপসটি ইনস্টল করি কিন্তু অ্যাপসের কিছুই বুঝতে না পারা আমি, প্রতিবারই অ্যাপসটি আনইস্টল করে ‍দিতে বাধ্য হয়। 

পরে একদিন নর্থ সাউথে পড়া বড় ভাইয়ের কাছে শুনি, ভাই নাকি ইভ্যালি থেকে বাইক কিনবেন বলে অর্ডার ‍দিয়েছেন। যে বাইকটা ভাই অর্ডার ‍দিয়েছেন তার মার্কেট প্রাইস এক লাখ উনয়াশি হাজার, যেটা ইভ্যালি ‍দিচ্ছে মাত্র আটানব্বই হাজারে। শুনে আমি আকাশ থেকে পড়লাম। আর মনে মনে একটা প্রতিজ্ঞা করে নিলাম ইভ্যালির সাথে আমাকে যুক্ত হতেই হবে। যেই কথা সেই কাজ, যে অ্যাপসের আগা-মাথা কিছুই বুঝিনা সেই অ্যাপস নিয়ে  ঘাটাঘাটি শুরু। দীর্ঘ আট ঘন্টার নিরলস পরিশ্রমে আমি ইভ্যালির চিরচেনা অ্যাপসের বিভিন্ন রহস্য উদঘাটন করলাম। সেই রহস্যের নাম আর কিছু না, ‍সেটা হচ্ছে “ইভ্যালি সাইক্লোন”। যেটা প্রতি শুক্রবার রাত দশটায় তিন ঘন্টা ‍সময় নিয়ে দেওয়া হতো। এই সময়ের জন্য হাজার হাজার বিদ্রোহী শ্রোতা বসে থাকতো যাতে তাদের অর্ডারটা সবার আগে কনফর্ম হয়। 

পরবর্তীতে আমিও সেই বিদ্রোহী শ্রোতাদের কাঁতারে নাম লিখালাম। আমার সর্বশেষ ‍সম্বল দিয়ে অর্ডার করলাম  একটা বাইক এবং একটা মোবাইল। যেহেতু আমি বিজনেস করার জন্যই ইভ্যালির সাথে যুক্ত হয়েছি। তাই বাইক বা মোবাইলের প্রতি আমার বিন্দু মাত্র আগ্রহ ছিলোনা। প্রথমে ভেবেছিলাম বাইক এবং মোবাইল পেলে সেটা বিক্রি করে দিয়ে নির্ধারিত টাকা নিয়ে অন্য কাজে লাগাবো। সেটা হতে পারে ইভ্যালিতেই আরো দুটো বাইকের অর্ডার দিবো অথবা অন্য কোনো বিজনেস। বলে রাখা ভালো আমি যে লাভ পাবো সেটা প্রায় ১ লাখের কিছুটা  ‍উপরে হবে বিধায় আমি এসব অসম্ভব কল্পনার জগৎ এ হারিয়ে গিয়েছিলাম। অর্ডার ‍দিয়েছিলাম মার্চের ১৩ তারিখ, ২০২১। আর এটাই ছিলো কোনো অনলাইন প্লাটফর্মে আমার প্রথম অর্ডার।

তারপর নানান সন্দহ, সংসয়, ভয় নিয়ে শুধু অপেক্ষা আর অপেক্ষা। ততোদিনে নানান বিষয় পর্যালোচনা আর নানা অভিযোগের ভিত্তিতে বুঝতে পারলাম। ইভ্যালি ই-কমার্স সাইটটি যেকোনো প্রডাক্ট ডেলিভারি দেওয়ার জন্য ৪৫ কর্ম-দিবস বা প্রাই ২মাসের কাছাকাছি সময় নিলেও ‍সেটা কাস্টমারের হাতে আসতে আসতে প্রায় ৬ মাস মতো সময় লাগায়। এতেই বাঁধে যত বিপত্তি। আর কাস্টমারদের হাজারো অভিযোগ। কিন্তু হাজারো অভিযোগ পর্যালোচনা করে দেখলাম এমন একজন কাস্টমারও পেলাম না যে ৭/৮ মাস অপেক্ষা করেছে অথচ প্রডাক্ট বা টাকা হাতে পাইনি। তাই এতটুকু নিশ্চিত হলাম যে আমার অর্ডারকৃত প্রডাক্ট পেতে হয়ত ৬-৮ মাস সময় লাগতে পারে কিন্তু প্রডাক্ট আমি পাবোই। এতসব হিসাবকষা শেষ হলে আবারো সেই অপেক্ষা আবারো সেই বিলম্বনা। 

অর্ডারের ঠিক ২মাস পর অর্থাৎ ইভ্যালির দেওয়া ৪৫কর্ম দিবস পার হয়ে গেছে। এতদিনে বুঝে ফেলেছি আমি তাদের নির্ধারিত টাইমের মধ্যে প্রডাক্ট পাবোনা, তারপরও আনমনা মন নিজেকে শান্তনা দেওয়ার জন্য কিছুদিন পরপরই তাদের কল সেন্টারে খোঁজ নিতো। ইভ্যালি কল সেন্টারকে আসলে কল সেন্টার বললে ভুল হবে, প্রত্যেকটা কল যখন ‍দিতাম মনে হতো কোনো এক সোনার হরিণ তল্লাসির জন্য কল ‍দিয়েছি। এ জনমে আর সোনার হরিণ পাবো কিনা সন্দেহ। প্রতিটা সময়ে ৫/৭/৯ মিনিট পর ওপাস থেকে আওয়াজ আসতো, “ইভ্যালি কল সেন্টার থেকে বলছি, বলুন স্যার! কীভাবে আপনাকে সহযোগিতা করতে পারি।” যতবারি তাদের সমস্যা গুলো নিয়ে চ্যাটে বা কলে কথা বলেছি ততোবারি একই রিপ্লাই পেতে পেতে এখন প্রায় মুকস্ত হয়ে গেছে ইভ্যালি কল সেন্টারে কল ‍দিলে কি বলবে। তবে "ইভ্যালি আছে হারিয়ে যায়নি" এটা বুঝানোর জন্য তারা যদি কল সেন্টারে লোক নিয়োগ ‍দিয়ে থাকে সেটা ভিন্ন বিষয়।

আচ্ছা! যে বিষয়টা নিয়ে কথা বলছিলাম, অর্ডারের ঠিক ২মাস পর ফেসবুকে একটা গ্রুপের মাধ্যমে জানতে পারলাম। ইভ্যালি থেকে চেক দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ যারা বাইক নিতে ইচ্ছুক না, তারা চাইলে চেকও নিতে পারে। তবে অবশ্যয় ইভ্যালির ফেসবুক পেজে যে ফর্ম লিংকটা দেওয়া হয়েছে তা পূরণ করে দিতে হবে। এ যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। কেননা, আমি যেহেতু বাইক কিনে আবার বিক্রি করবো। তাই এই নিউজটা আমাকে কতটা আনন্দ দিয়েছিলো সেটা বুঝতেই পারছেন। এখন আর আমাকে আটকায়কে, ওমনি ফর্ম পূরণ করা শেষ। সাথে সাথে এটাও ভেবে নিলাম এবার একটু শান্তিতে ঘুমোতে পারবো।

সব জল্পনা-কল্পনা শেষে অর্ডারের ঠিক ৩মাস পর কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে চেকটা হাতে পেলাম। চেকের টাকা উত্তলোনের ডেট আবার অর্ডারের ৬মাস পর। তাতে কি চেক তো পেয়েছি। চেক হাতে পাওয়ার পরে যে আনন্দ সেটা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। তারপর মনে হলো হয়তো আমার মত এরকম হাজারো মধ্যবৃত্তর সপ্ন পূরণ করে চলেছে এই ছোট্ট ই-কমার্স সাইটটি।

সাথে সাথে কিছুদিনের মধ্যে জানতে পারলাম আরো অনেক ই-কমার্স যেমন: কিউকম, আলিশামার্ট, চালডাল ইত্যাদি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আমাদেরই এদেশে। মাঝে মাঝে গর্ব হয় তাদের জন্য। 

এরপর মে মাসে আরো একটা সি সি ক্যামেরা ও বাইকের অর্ডার দিয়েছি। জানি ওটাও ৬মাস পরে পাবো। মোবাইল যেটা মার্চের ১৩ তারিখে অর্ডার করেছিলাম সেটার রিফান্ড দেবে বলে তারা জানিয়েছে। অর্থাৎ তারা যেহেতু ৪৫কর্ম ‍দিবসের মধ্যে দিতে পারেনি। তাই রিপোর্ট সাবমিট করেছিলাম, তারা রিফান্ড এপ্রুভ করেছে। যদিও তারা জানিয়েছে আপনার মোবাইলের রিফান্ড আপনি যেহেতু নগদের মাধ্যমে পেমেন্ট করেছেন। তাই নগদের মাধ্যমেই রিফান্ড এপ্রুভ হওয়ায়, ২২ কর্মদিবস অর্থাৎ প্রায় ১মাস ১০ দিনের মধ্যে রিফান্ড পেয়ে যাবেন। রিফান্ডে আমাকে মার্কেট প্রাইসটাই অর্থাৎ যে টাকা আমি ইভ্যালিকে দিয়েছি তার থেকে প্রায় ১০হাজার টাকা বেশি দেবে। তবে আমি এটাও জানি  অর্ডারের ৬মাস না হওয়া অব্দি আমি সেই রিফান্ড পাচ্ছিনা। তাই জুলাই পার হতে চললো এখনো গাট্টি মেরে বসে থাকা ছাড়া কোনো উপায় নেই।

তবে ইভ্যালির একজন কাস্টমার হিসেবে আমাদের দেশের কিছু বিদ্রহী-সাহসী ছেলেদের সম্পর্কে কথা না বলে পারছিনা। তাদের জন্যেই আজ ই-কমার্স সাইটগুলো বিপদের সম্মুখীন। তাদের কাছে আমার শুধু একটাই চাওয়া আপনারা যদি পারেন এর থেকে ভালো কোনো ই-কমার্স তৈরি করে, এদেশের অর্থনৈতিকে আরো সমৃদ্ধ করেন। আমি আপনাদের সম্পূর্ণ সাপোর্ট করবো। আর যদি না পারেন, তাহলে  ই-কমার্স সাইটগুলোকে সামনের ‍দিকে এগিয়ে নিতে সাহায়তা করুন। কেননা, এই ই-কমার্স সাইটগুলোর প্রত্যেকটিই আমাদের দেশের। তাই সেগুলোকে সামনের ‍দিকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্বটাও আমাদের।



আমাদের ফেসবুক গ্রুপ লিংক:
আমাদের ফেসবুক পেজ লিংক:
ঢাকার মধ্যে টু-লেট সংক্রান্ত সকল তথ্য পেতে জয়েন করুন: