অজিদের সাথে প্রথম টি টুয়েন্টিতেই ইতিহাস রচনা বাংলাদেশের

 দীর্ঘ ২২ বছরের প্রতিক্ষার পর কোনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টিম অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। অজিদের বিরুদ্ধে এই প্রথম কোনো টি টুয়েন্টি ম্যাচ জিতলো বাংলাদেশ। নাসুম আহাম্মেদের বোলিং জাদুতে ঐতিহাসিক জয় পেলো বাংলাদেশ। সেই সাথে রচনা করলো আরো একটা ইতিহাস। আরো একবার বিশ্ব শুনলো বাঘের গর্জন।


অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম অয়ানডে সিরিজ জয় পেয়েছিলো ২০০৫ সালে। তারপর কোনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ জয় পেতে অপেক্ষা করতে হয়ছিলো ২০১৭ সাল পর্যন্ত। ২০১৭ সালে টেস্ট জয়ের পর এই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক টি টুয়েন্টি ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর গৌরভ অর্জন করলো বাংলাদেশ। সেই সাথে রচনা করলো বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের নতুন এক অধ্যায়। 

অতিতে চারবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপ ম্যাচে অংশ নেওয়া হলেও তাদের দাম্ভিকতার কারনে কোনো বারই দিপাক্ষিক সিরিজ খেলা হয়েনি বাংলাদেশের। বাংলাদেশে এই প্রথম কোনো দিপাক্ষিক সিরিজের সুযোগ পেয়ে প্রথম ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়ার দাম্ভিকতা ভেঙে দিলো তামিম মুশফিকহীন বাংলাদেশ।


 

বোলারদের দারুন নৈপুণ্যে পাঁচ ম্যাচ সিরিজের প্রথম ম্যাচ জয়ের মধ্য দিয়ে ১-০ তে এগিয়ে গেলো স্বাগতিকরা। হোম অব ক্রিকেট খ্যাত মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৩১ রান জড়ো করে বাংলাদেশ। মন্থর উইকেটে সাকিব আল হাসানের চোখ জুড়ানো ৩৩ বলে ৩৬ রান, নাঈম শেখের ২৯ বলে ৩০ রান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ২০ বলে ২০ রানের  মন মাতানো ইনিংস রেখেছে বড় ভূমিকা।

বাংলাদেশের ইনিংসে তিন ছক্কার দুটিই হাঁকান নাঈম এবং একটি রিয়াদ। অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া শর্তের কারনে বল গ্যালারিতে আছড়ে পড়ায় স্বভাবতই বলগুলো আর মাঠে ফেরত আসেনি। তাই ম্যাচ অফিসিয়ালরা নতুন বল বেছে নিতে বাধ্য হন। 

অজিদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের দিনে সবসময়ের মতো ছন্দে ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক নতুন সংযোজন আফিফ হোসেন ধ্রুব। শেষদিকে মাত্র ১৭ বলের মোকাবেলায় ২৩ রানের এক অনবদ্য ইনিংস উপহার দেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে জশ হ্যাজলউড তিনটি, মিচেল স্টার্ক দুটি এবং অ্যান্ড্রু টাই  অ্যাডাম জাম্পা একটি করে উইকেট শিকার করেন।

জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে প্রথম ওভারে অ্যালেক্স ক্যারি, দ্বিতীয় ওভারে জশ ফিলিপ ও তৃতীয় ওভারে মইসেস হ্যানরিকসকে সাজঘরে ফেরান যথাক্রমে শেখ মেহেদী হাসান, নাসুম আহমেদ ও সাকিব আল হাসান। মাত্র ১১ রানে ৩ উইকেট হারালে মানোসিক চাপে পড়ে যায় সফরকারীরা। সেই চাপ মিচেল মার্শ সামলানোর চেষ্টা করলেও। তিনি অস্ট্রেলিয়াকে রক্ষা করতে পুরোপুরি ব্যার্থ হনআপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েডও। তবে ২৩ বল মোকাবেলায় মাত্র ১৩ রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি। নাসুমের সেরা বোলিংয়ের দিনে অজি ব্যাটসম্যানরা টিকতে না পেরে সাজঘরে ফেরার প্রতিযোগিতায় নামতে বাধ্য হয়। সেই সাথে ভেস্তে যায় বাংলাদেশের বিপক্ষে তাদের সকল পরিকল্পনা। নাসুমের  বলে একে একে উইকেট হারান মিচেল মার্শ, অ্যাশটন’ অ্যাগার ও টার্নার। অ্যাগার দুর্ভাগ্যবশত পা দিয়ে স্টাম্প ফেলে ‍দিয়ে হিট উইকেটের শিকার হন। ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ৪৫ বলে ৪৫ রান করা মিচেল মার্শ বিদায় নিলেই মূলত ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। মাত্র ১০৮ রানেই গুটিয়ে যায় তারা।


সংক্ষিপ্ত স্কোর 

টস : অস্ট্রেলিয়া

বাংলাদেশ : ১৩১/৭ (২০ ওভার)
সাকিব ৩৬, নাঈম ৩০, আফিফ ২৩, রিয়াদ ২০
হ্যাজলউড ২৪/৩, স্টার্ক ৩৩/২ জাম্পা ২৮/১

অস্ট্রেলিয়া : ১০৮/১০ (২০ ওভার)
মার্শ ৪৫, ওয়েড ১৩
নাসুম ১৯/৪, মুস্তাফিজ ১৬/২, শরিফুল ১৯/২, মেহেদী ২২/১, সাকিব ২৪/১

ফল : বাংলাদেশ ২৩ রানে জয়ী।