কুরআন আর আমি

  || ২৬ জুলাই, ২০২১ || মাহামুদুল হাসান অয়ন || সময়ঃ রাত ১০টা বেজে ৩০মিনিট ||

কুরআন শিখার জন্য ছটফট করছিলাম।  হয়তো এটা এবারই প্রথম হয়েছে। তবে আমার মনে পড়ে সেই ক্লাস ওয়ানে থাকতে আমার ছোট্ট গ্রামে, এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে যেতাম কুরআন শেখার জন্য। অবশ্য তখনও জানতাম না কেনো কুরআন শিখছি। আজ আবার সেই কুরআনকে আলিঙ্গন করার অভিপ্রায় নিয়েই, কুরআন শিখতে বসা।  কিন্তু আজ আর আমার জানার বাকি নেই যে, এই মহান কিতাব নিয়ে কেনো ছোটবেলাতে দৌড়াদৌড়ি করতাম। আফসোস! তখন যদি এই বুঝটা পেতাম তাহলে হয়তো আজ কুরআন আমার জীবন ও মরণের সঙ্গী হতো। 

আমি নতুন করে শুরু করবো ভেবেছি। আর আল্লাহর কাছে আমার একটাই চাওয়া মৃত্যু পর্যন্ত এই কুরআনকে আমি যেনো আমার পথপ্রদর্শক রুপে গ্রহন করতে পারি। 

বিশ্বনবী (সাঃ) মোট ছয়টি নফল ইবাদাতের কথা আমাদেরকে বলে গেছেন এবং করার জন্য উৎসাহ প্রদান করেছেন যা মহান আল্লাহ সুবহানা তায়ালার  নিকট অধিক প্রিয়। বিশ্বনবী (সাঃ) বলেন, "সবচাইতে দামী নফল ইবাদাত হচ্ছে কুরআন তেলাওয়াত।" অর্থাৎ যতো নফল ইবাদাত আছে তারমধ্যে এক নম্বরে থাকবে কুরআন তেলাওয়াত। আল্লহু-আকবর

হায়! আমি কুরআানের ফজিলত বলে কীভাবে শেষ করি। যদি প্রতিটি পাতাকে কাগজ আর সমুদ্রের পানিকে কালি বানানো হয়, তবুও কুরআনের ফজিলত লিখে শেষ করা যাবে না। যে কুরআনের কারণে দিনকে শ্রেষ্ঠ দিন, মাসকে শ্রষ্ঠ মাস, নবী কে শ্রষ্ঠ নবী বানানো হয়েছে। সেই কুরআানের ফাজিলত এমন হবে এটাই তো স্বাভাবিক।

"কুরআনের এক একটি অক্ষরের বিনিময়ে ১০নেকি ও এক এক আয়াতের বিনিময়ে জান্নাতের মধ্যে বাড়ি এক এক তলা পরিমান বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়!" সুবহানাল্লহ।  পৃথিবীর অন্য এমন কোনো কিতাব নেই যার ব্যাপারে মহান আল্লহ যিনি সমগ্র জাহানের মালিক তিনি ওয়াদাবদ্ধ,একমাত্র কুরআন ছাড়া।

আপনি হয়তো বলবেন, "ভাই, আমি কেনো কুরআন পড়বো?" ভাই, আপনি কি জানেন, "কুরআন হচ্ছে মুত্তাকিদের জন্য পথনির্দেশক" -না! এ কিতাবে আপনি কোনো ভুল খুঁজে পেয়েছেন? না! কিয়ামত পর্যন্ত কেউ ভুল খুঁজে পাবে। এটাই একমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত সর্বশেষ সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব। হায়! কতসুন্দর কথা। এর প্রতিটি আয়াত আপনাকে হাঁসাবে,কাঁদাবে,পুলকিতো ও রোমাঞ্চিত করবে। প্রতিটি বিষয় আপনার কষ্টে ভরা মনকে আনন্দে ভরিয়ে তুলবে। কি নেই এতে বিজ্ঞান, রাষ্ট্রনীতি, সংস্কৃতি, চরিত্র, আরোগ্য, নিরাময়, ভালোবাসা সব কিছুর সম্মিলিত এক মহামুল্যবান কিতাব এই আল্ কুরআনুল কারীম। মহানবী (সাঃ) বলেন, "কিয়ামতের দিন কুরআন ও সিয়াম বান্দার জন্য সুপারিশ করবে।" এরকম কথা আর একটা ব্যাপারেও বলা হয়েছে বলে উল্লেখ নেই। ভাবুন তো, এ কিতাবটি তাহলে মুমিনদের জন্য কতটা মুল্যবান। তাই দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তির জন্য, এ কিতাবটি আপনের একবার হলেও পড়া উচিৎ। 

কেনোনা, হুমায়ুন আহমেদ, বিল গ্রেটস বা পৃথিবীর এমন কেউ নেই যে আপনাকে মৃত্যুর পূর্ববর্তী ও পরবর্তী জীবনের পথ দেখাবে, একমাত্র কুরআন ছাড়া। জীবনের প্রতিটি ধাপের সমাধানের একছত্র অধিপতি এই কুরআন। হয়তো তার জন্যই বলা হয়েছে, "সমাধান চাও যদি জীবনে মরণে ফিরে যাও খুঁজে নেও চোখ রাখ কুরআনে।" হায়! মাশ-আল্লহ! কতইনা সুন্দর কথা। আল্লহ বলেন, "মানুষের প্রয়োজনীয় এমন কোনো জিনিস নেই যা আমি কুরআনে দেইনি।" একবার ভাবুন তো, নিজের প্রয়োজনের জন্য আপনি নিজ ভাইকে পর্যন্ত খুন করতে পারেন। সেখানে আপনাকে খুন,ঘুষ,মিথ্যা,অপবাদ ছাড়ায় আপনের প্রয়োজন মেটানোর উপায় বলে দিচ্ছে আল্ কুরআন। সুবহান-আল্লহ। এমন আর একটি কিতাব কল্পনাতেও ধরা দেবে বলে আমার মনে হয় না। একবার হযরত আয়েশা (রাঃ) রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। রাসূলে (সাঃ) মুচকি হেঁসে আয়েশাকে উত্তর দিলেন, "আমার নৈতিকতা যদি জানতেই চাও। তবে তা হলো আল্ কুরআন।" রাসূলের নৈতিকতা কার না মানতে ইচ্ছে করে! আর তা যদি হয় আল্ কুরআনের মতো গ্রন্থ তাহলে তা সম্পর্কে আমরা জানবোই না কেন?

কুরআন শুধু আপনের প্রয়োজনী মিটাবে না। আপনার চোখ খুলবে, আপনের ঘুমন্ত বিবেককে জাগ্রত করবে, আপনাকে মানুষের মতো মানুষ করে তুলবে। আর সেটাই তো আমাদের চাওয়া পাওয়া। আল্লাহ সুবহানা তায়ালা বলেন, "হে নবী, আমি কুরআনকে আপনের কাছে পাঠিয়েছি অন্ধকার থেকে আলোর দিকে পথ দেখানোর জন্য।" সুবহান-আল্লহ! আল্লহ কি না করেছেন আমাদের জন্য? আমাদেরকে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবীর উম্মত বানিয়েছেন! সৃষ্টির শ্রষ্ঠ জীব হিসেবে তৈরি করেছেন! মুক্তির পুরস্কার সরুপ রামাদানের মতো একটা মহিমান্বিত মাস দিয়েছেন! অথচ আমরা তার পরিবর্তে শুধুই তার অবাধ্যতাটাই দিতে পেরেছি। যার করুন পরিনতি ও তা থেকে উত্তরণের উপায়ের কথাও আল্লহ সুবহানা তায়ালা কুরআনুল কারিমে বলে দিয়েছেন। যেখানে এতো কিছু আছে, সে কিতাব না পড়ে আমরা কি করে থাকতে পারি।

রমজান মাস ফজিলতের মাস এ মাসে সাওয়াব "সত্তর থেকে সাতশত গুন পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।" "নফল ইবাদাতকে ফরজের সাওয়াব দেওয়া হয়।" এতোকিছু জানার পরো কুরআন না শিখে কি করে থাকি। তাই শুরু করলাম। আল্লহ যেনো তার এ মহান কিতাব বোঝার ও সঠিক উপায়ে হৃদয়াঙ্গম করার তৌফিক দান করেন।

পরিবারের সবার সাথে কুরআন তেলাওয়াতের মতো কাজ কয়টা পরিবারেই বা করে। অথচ তারা বলে তারা আল্লহ ও তার আযাবকে ভয় পায়। আসলে তারা আল্লাহ কে ভয় পেলে আল্লহ বিপদ থেকে পরিত্রাণ দান করতো। কিন্তু আফসোস! তারা সবাই মৃত্যুকে ভয় পায়। যেখানে মৃত্যুকে মুমিনরা আলিঙ্গন করে সেখানে তারা ভয়ে পিছে হোঁটে যায়। যা সত্যি নিদারুণ কষ্টের ও যন্ত্রণার। আমাদের উচিৎ আল্লাহকে ভয় করা এবং তারই কাজে জীবনকে উৎসর্গ করা এবং যে কিতাব এতটা মহিমান্বিত সে কিতাবে কি লিখা আছে তা একবার হলেও যাচাই করা। 

❤সবাইকে নতুন দিনের শুভেচ্ছা ও কুরআন সহীহ শুদ্ধ ও বুঝে পড়ার আমন্ত্রন রইলো। হায়! কুরআন পড়ার জন্য রমজানের চেয়ে উত্তম মাস আর যৌবনের চেয়ে উত্তম সময় আর কিইবা হতে পারে!❤